আফ্রিকায় ব্যবসার পথ খুঁজে নিচ্ছে বেসরকারি খাত



আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধশালী দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ দূতাবাস খুলেছে ১৯৯৫ সালে। অথচ এই আড়াই দশকে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছে মাত্র একটি এবং সেটিও সই হয়েছে গত ফেব্রুয়ারিতে। ফলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ বাড়েনি, বাড়েনি ব্যবসা-বাণিজ্যও।
এর বিপরীতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সোমালিয়ায় গত এক বছর ধরে তৈরি পোশাক ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করছেন মোহাম্মদ ওয়াহিদ আলম। মুরগি ও ডিম রফতানি করার পরিকল্পনাও আছে তার। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আফ্রিকার অনেক দেশের সঙ্গেই ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিসহ অনেক কিছু সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
ওয়াহিদ আলম বলেন, ‘সোমালিয়ায় ১০০ কেজি ওজনের একটি ভালো প্রজাতির গরুর দাম ২০ হাজার টাকার মতো। কোরবানির ঈদের সময়ে আমি যদি জাহাজে করে এই ধরনের গরু আনতে পারি, তবে ঢাকার বাজারে বিক্রি করে লাভ করতে পারবো।’
এই ব্যবসায়ীর মতে, সোমালিয়ায় একটি ‘মিট ইন্ডাস্ট্রি’ করে সেখান থেকে যদি প্রক্রিয়াজাত মাংস এনে দেশে কেজিপ্রতি ৩৫০ টাকায় বিক্রি করা যায়, তাও লাভ থাকবে। বাংলাদেশে এখন গরুর মাংসের দাম কেজিপ্রতি কমবেশি সাড়ে ৫০০ টাকা।
রাজনৈতিক যোগাযোগ
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আফ্রিকার ৫৪টি দেশের প্রতিটিরই রাজনৈতিক যোগাযোগের অভাব আছে। ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরক্কোর প্রয়াত রাজার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। পরে ২০১৬ সালে মরক্কোয় গিয়েছিলেন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে। এর বিপরীতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আফ্রিকার একাধিক দেশ সফর করেছেন। এমনকি শি জিনপিং চীন-আফ্রিকা সম্পর্ক গভীরতর করতে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতিনিয়ত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ সফরে পাঠাচ্ছেন।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, ‘আফ্রিকার সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় অনেক বিষয়ে আমাদের অবস্থান এক।’
আফ্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ফরেন অফিস কনসালটেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন সমস্যা ও সুযোগ নিয়ে আলোচনা করার পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব আরও জানান, বিভিন্ন ব্যবসায়িক চেম্বার ও সরকারের প্রতিনিধিরা আফ্রিকা সফর করে ব্যবসার সুযোগ অনুসন্ধান করছেন। আশা করা যায়, সামনের দিনগুলোতে দুই পক্ষের বন্ধন আরও জোরদার হবে।
ব্যবসা-বাণিজ্য
গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের রফতানি ছিল প্রায় সাত কোটি ডলারের। মিসরে রফতানির পরিমাণ ছিল তিন কোটি ডলারেরও কম। সব মিলিয়ে আফ্রিকার ৫৪টি দেশে মোট রফতানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩২ কোটি ডলার।
ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ওয়াহিদ আলম বলেন, ‘এটি বাড়ানো সম্ভব যদি সরকার আরও উদ্যোগী হয়।’
সমস্যার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সোমালিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করলেও আমি টাকা পাই তৃতীয় একটি দেশের মাধ্যমে। বাংলাদেশ সরকার যদি একটি আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের ব্যবস্থা করতো, তবে আমার খরচও অনেক কম হতো এবং সুবিধাও বাড়তো।’
নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনায় ওয়াহিদ আলম বলেন, ‘সোমালিয়ান একজন ছাত্র বাংলাদেশে পড়াশোনা করেছে; তার মাধ্যমে আমি সোমালিয়ায় ব্যবসার সুযোগ পেয়েছি।’ তিনি জানান, বর্তমানে প্রায় চার হাজারের বেশি সোমালিয়ান ছাত্র বাংলাদেশে পড়াশোনা করছে। তার মতে, বাংলাদেশের এই ‘সফট পাওয়ার’ ব্যবহার করেও আফ্রিকায় বাণিজ্য বাড়ানো সম্ভব।