নতুন ইসি সচিবকে নিয়ে বিএনপির আপত্তি


মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “নির্বাচন কমিশনের সচিব করা হয়েছে কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর হোসেনকে, যিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুগত ও বিশ্বস্ত হিসেবে ইতোমধ্যে পরিচিত অর্জন করেছেন। সরকারের এই পদক্ষেপ ধ্বংসপ্রাপ্ত গণতন্ত্র ও লুপ্তপ্রায় সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর মরার ওপর খাঁড়ার ঘা, যা এক ভয়ঙ্কর অশনি সংকেত।”
এতদিন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করে আসা হেলালুদ্দীন আহমদকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের দায়িত্বে পাঠিয়ে আলমগীরকে ইসিতে এনেছে সরকার।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নির্বাচন কমিশনের সচিবের দায়িত্ব পালন করা হেলালুদ্দীনকে নিয়েও বিভিন্ন সময়ে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি
রিজভী বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের মতো স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে এই অবৈধ সরকার কর্তৃক আওয়ামী চেতনাপুষ্ট একনিষ্ঠ ও পরীক্ষিত ক্যাডারদের বাছাই করে নিয়োগ দেওয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
আলমগীর হোসেনের বদলে ‘একজন দক্ষ দল নিরপেক্ষ সরকারি কর্মকর্তাকে’ ইসির সচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানানো হয় বিএনপির সংবাদ সম্মেলন থেকে।
হেলালুদ্দীনে ‘ষোলকলা পূর্ণ’
বিদায়ী ইসি সচিব হেলালুদ্দীনকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দেওয়ার সমালোচনা করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “মিডনাইট ভোট ডাকাতির অন্যতম কারিগর নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে পুরস্কৃত করেছে মিডনাইট সরকার।
“আওয়ামী দলদাস সরকারি কর্মকর্তা ও ভোটারশূন্য একতরফা নির্বাচনী সংস্কৃতির হোতাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বদলি করার ফলে দেশের স্থানীয় সরকারগুলোতে আওয়ামীকরণের ষোলকলা পূর্ণ হবে। এখন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্বাচনের বদলে সিলেকশনের পথ আরও সহজ হবে।”
কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি
ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় দরিদ্র কৃষকের করুণ দশার কথা তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ধান পুড়িয়ে দেওয়ার একই দৃশ্য সারাদেশে সংঘটিত হচ্ছে। চারদিকে দেখা দিয়েছে নৈরাজ্য, অস্বস্তি, ক্ষুধা ও হাহাকার। ধানের ন্যায্য মূল্য নিয়ে সরকার উদাসীন। এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই, বরং প্রতিদিন তা বৃত্তপথে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রতিদিনই কৃষকের মনে অন্ধকার ঘন থেকে ঘনতর হচ্ছে।”
সরকারি নীতির কারণে কৃষকের এই দুর্গতি তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “কৃষিক্ষেত্রে এই অরাজগতার জন্য দায়ী কৃষি মন্ত্রী ও খাদ্য মন্ত্রী। আমরা এই মুহূর্তে তাদের পদত্যাগ দাবি করছি। কোনো সভ্য সরকার হলে ইতোমধ্যে কৃষিমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করে ফেলতেন।”
সরকারের উদ্দেশে এই বিএনপি নেতা বলেন, “জোর জবরদস্তি করে আর ক্ষমতায় থেকে দেশের জনগণের প্রতি জুলুম করবেন না। অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন, জনগনকে বাঁচতে দিন।”
নাসিমকে ‘সাধুবাদ’
আওয়ামী লীগের মধ্যেও ভেজালকারী ঢুকেছে- এমন মন্তব্যের জন্য দলটির সভাপতিণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমকে ‘সাধুবাদ’ জানান রিজভী।
তিনি বলেন, “বহুদিন পরে একটা সত্য কথা বলেছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সাহেব, এজন্য তাকে ধন্যবাদ। আপনারা দেখেছেন যে উনারা প্রায়ই উপদেশ দিয়ে থাকেন বিএনপিকে। মানে একেক জন জ্ঞানী সেক্রেটিসের মতো ব্যক্তি হয়ে গেছেন আর কি!... নিজেদেরও যে কিছু উপলব্ধি হয়েছে, নিজেদের দলে যে ভেজাল দেওয়ার লোক ঢুকে গেছে, মাদক ব্যবসায়ীরা আছেন…. । এই আত্ম উপলব্ধির জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় হতাশা থেকে নাসিমের এই উপলব্ধি হয়েছে কি না- সেই প্রশ্নও রাখেন রিজভী।
অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক শাহিদা রফিক, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, বেলাল আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।