চায়ের কাপে ভোটের ঝড় শান্তিগঞ্জে উপজেলা নির্বাচন , আলোচনায় এগিয়ে সাদাত মান্নান অভি

নিজেস্ব প্রতিবেদক :: সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ৮টি ইউনিয়ন ও ১৫৫টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। এই উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৭৯৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৪ হাজার ২৮৫ জন এবং নারী ভোটার ৭১ হাজার ৫১০ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ২ জন। এবার শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৩ জন প্রার্থী। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৫ জন। আগামী ৫ জুন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে উপজেলার প্রতিটি জনপদ। চারিদিকে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে উপজেলার ১৫৫টি গ্রাম ও হাট-বাজার। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত মাইকিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন উপজেলাবাসী। বিশেষ করে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ঘিরেই উপজেলার ভোটাররাদের মধ্যে চলছে আলোচনা। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আছে ভোটারদেরও জল্পনা-কল্পনা আর উৎকণ্ঠতা বাড়ছেই। কে হচ্ছেন আগামীর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। পাড়া মহল্লা ও হাট-বাজারে নির্বাচনকে নিয়ে চায়ের কাপে উঠছে ভোটের ঝড়।

সরেজমিনে ঘুরে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থীর নিজস্ব ভোটের এলাকা আছে। তবে দুইজন প্রার্থীর কম বেশি ভোট আছে উপজেলাজুড়ে। বাঙালি উৎসব প্রিয় জাতি। যে কোনো একটা উপলক্ষ পেলেই মেতে উঠে আনন্দ-উল্লাসে। সেই ভোটের উৎসব শান্তিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের আনাচে কানাচে। চায়ের দোকানে চলছে আড্ডা, চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বাকবিতন্ডা যে চলছে না তাও নয়। এম এ মান্নান পুত্র অর্থনীতিবিদ সাদাত মান্নান অভি এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি বিস্তার করেছেন ও ভোটের মাঠে বেশ উন্নতি করেছেন বলে আলোচনা রয়েছে। আবুল কালামও রয়েছেন আলোচনায়। বোরহান উদ্দিন দোলনও রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো ও ভোট বর্জন করায় বিএনপির কোন প্রার্থী ভোটে না আসায় শুধু মাত্র আওয়ামী লীগে আওয়ামী লীগের লড়াই হবে। শান্তিগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুইটি গ্রুপ রয়েছে। মান্নান ও ডন গ্রুপের দ্বন্দ্ব সেই পুরনো।

 

ডন গ্রুপের অন্যতম ছিলেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন দোলন, আবুল কালাম ছিলেন মান্নান এন্টি। এমন দ্বন্দ্বের মধ্যে মান্নান অনুসারীদের প্রার্থী একক। তাই সাদাত মান্নান অভির মাঠ এখন গরম। ভোটাররা বলছেন, লড়াই হবে মান্নান পুত্র অভি’র সঙ্গেই। ভোটারদের কাছে বিভিন্ন উন্নয়নের কথা বলে মন জয় করার চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনী মাঠে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের পরপরই প্রচারণায় নেমে পড়েছেন এবং এলাকার উন্নয়নের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয় করতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ, উঠোন বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান এলাকার ভোটাররা।

সাদাত মান্নান অভি, তিনি সুনামগঞ্জ-৩ আসনের টানা চারবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপির একমাত্র পুত্র। তিনি লন্ডনের বার্কলেইজ ব্যাংকের এমডি ছিলেন। টানা ২০ বছর এই ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। তিনি তার পিতার জায়গাটি ধরে রাখতে ও এলাকার মানুষের চাপে রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমানে তিনি শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সভাপতির দায়িত্বে আছেন। শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়াম্যান পদে তাঁর প্রতীক (আনারস)।

আবুল কালাম, উচ্চ শিক্ষিত না হলেও পুরনো রাজনীতিবিদ ও একজন সফল ব্যবসায়ী। জন্মসূত্রে শান্তিগঞ্জের বাসিন্দা হলেও বাসস্থান, ব্যবসা ও রাজনীতি সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীক। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে দীর্ঘ দিন ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আবুল কালামের প্রতীক (মোটরসাইকেল)। মান্নান বলয়ের বাইরের নেতাকর্মীরা তাঁকে নিয়েই মাঠে নেমেছেন।

বোরহান উদ্দিন দোলন সুনামগঞ্জ বারের আইনজীবী ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ছাত্রজীবনে তিনি সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ভিপি হিসাবেও সফলতার সাথে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনেই তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে লড়েছেন। এবারও তিনি প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। কর্মী ও সর্মথকদের নিয়ে ভোটের মাঠে গণসংযোগ ও প্রচারণায় ব্যস্থ সময় পার করছেন তিনি। তাঁর প্রতীক ঘোড়া।

 

চেয়াম্যান প্রার্থী অ্যাডভোটেক বোরহান উদ্দিন দোলন বললেন, ভোটের মাঠে আজিজুস সামাদ আজাদ ডন কালাম সাহেবকে সমর্থন দেওয়ায় আমার কোন ক্ষতি হয় নি বরং ভালো হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুস সামাদ আজাদ ডন সাহেবের ও উনার সর্মর্থিত প্রার্থী কালাম সাহেবের। এ ঘটনায় আমার নেতাকর্মীরা আরও ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।

চেয়াম্যান প্রার্থী আবুল কামালম বললেন, আমি এই উপজেলার একবারের চেয়াম্যান ছিলাম। চেয়াম্যান থাকাকালীন অবস্থায় অনেক উন্নয়ন করেছি। স্কুল-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছি। এবার নির্বাচিত হলে শিক্ষার দিকে আরও বেশি নজর দিবো। কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুস সামাদ আজাদ ডন আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে কে কারে সমর্থন দিল সেটা ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর নয়। ভোটের মাঠে প্রার্থীর জনপ্রিয়তায় আসল। আমি শতভাগ আশাবাদী এই নির্বাচনে বিজয়ী হবো।

চেয়ারম্যান প্রার্থী অর্থনীতিবিদ সাদাত মান্নান অভি বললেন, আমার বাবা তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময়ই এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছেন। সরকারি চাকুরিতে থাকাকালীন অবস্থায়ও মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। রাজনীতিতে এসে অবহেলিত সুনামগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি আধুনিক জেলায় রূপান্তর করেছেন। বাবার এমন কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এলাকার মানুষের চাপে আমিও রাজনীতিতে প্রবেশ করেছি। মানুষ আমাকে ব্যাপকভাবে উৎসাহ দিচ্ছেন। মাঠে দিনরাত নিঃস্বার্থে অসংখ্য মানুষ কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে গ্রামের সাধারণ ভোটাররা আমাকে বেশি উৎসাহ দিচ্ছেন।