বন্যায় বিপদে মানুষ, ভাড়া আদায়ে নৌকা ও মটরযানওয়ালাদের জুলুম



তৈয়বুর রহমান,সুনামগঞ্জ সদর

গেল ১৫ জুন থেকে সুনামগঞ্জের ১২ টি উপজেলার প্রায় ৬ লাখ মানুষকে বন্যার কারণে পানি বন্দি থাকতে হয়েছে। ২০ জুনের পর থেকে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে থাকলেও জেলার হাওরপাড়ের নিম্নাঞ্চলে এখনো ভাসমান অবস্থায় রয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।এখনো অনেক রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি পানির নিচে। বন্যা-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করতে জেলা প্রশাসন এখনো কাজ করছে। চারপাশে হাহাকার আর নানাবিধ সমস্যা। 
বন্যার এই সংকটকালীন মুহুর্তকে অনেকেই ব্যবসার পুঁজি হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। স্থানীয় বাজারগুলোতে  নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা বিরাজ করছে একশ্রেণির  ব্যবসায়ীদের মধ্যে।এ নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট  কাজ করলেও মটরযান ও নৌকা ভাড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাধারণ মানুষ। এমনিতেই ভোগান্তির শেষ নেই তার উপর ভাড়া সিণ্ডিকেটের জুলুম সাধারণ মানুষকে নিরবে সহ্য করতে হচ্ছে। সুনামগঞ্জ আব্দুজ জহুর সেতু (সুরমা ব্রীজ) থেকে জামালগঞ্জের সাচনা বাজারের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। সুনামগঞ্জ টু জামালগঞ্জের নির্ধারিত ভাড়া ৬০ টাকা হলেও ড্রাইভারগণ মনগড়া ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
 জামালগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা,সুনামগঞ্জ সাহিত্য সংসদের সদস্য আফজাল হোসেন আব্দুজ জহুর (সুরমা সেতু) থেকে সাচনা বাজার যাওয়ার সময় এক সিএনজি ড্রাইবার ৬০ টাকা ভাড়ার স্থলে ১০০ টাকা ভাড়া দাবি করে। আফজাল বলেন- প্রশাসন থেকে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা করে দেয়া আছে। অতিরিক্ত ভাড়া কেন দেব? সিএনজি ওয়ালা জবাব দেয়, গেলে যাবেন, না গেলে নেই।এভাবে তাদের চাহিদা মত ভাড়া না দিলে যাত্রী না নিয়েই চলে যাচ্ছে সিএনজিওয়ালা।
২৩ জুন,রোববার বিকালে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাদাঘাট দক্ষিণ ইউনিয়নের শক্তিয়ারখলা এলাকার বাসিন্দা সিলেটের এমসি কলেজের এক শিক্ষার্থীকেও অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়েছে। তিনি বলেন- সুনামগঞ্জের আব্দুজ জহুর সেতু থেকে শক্তিয়ারখলা বাজারের নির্ধারিত ভাড়া ৮০ টাকা।কিন্তু বন্যার কারণে সিএনজি ড্রাইবাররা ১০০ টাকা করে আদায় করছেন।কেউ না দিতে চাইলে সিএনজিতে উঠতে দিচ্ছেন না। ২২ জুনের আগে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাঘমারা বাজার পেরিয়ে দুর্গাপুর পয়েন্ট থেকে শক্তিয়ারখলা বাজারের আগ পর্যন্ত আধা কিলোমিটারের মত রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এই অল্প একটু রাস্তার জন্য বালু ও পাথরবাহী নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপারের জন্য জনপতি ২০ টাকা করে নিয়েছে নৌকা সিন্ডিকেট।আর এভাবেই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সাধারণ মানুষেরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সুনামগঞ্জের অন্যতম সীমান্তিক উপজেলা দোয়ারা বাজারের বাসিন্দাদের কাছ থেকেও পাওয়া যায় একই রকম অভিযোগ। সীমান্তের একদম কাছাকাছি হওয়ায় সুনামগঞ্জের ১২ টি উপজেলার চেয়ে সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই উপজেলা। দোয়ারা বাজার উপজেলার  সুরমা,লক্ষীপুর,বোগলা ইউনিয়নের প্রায় ১৫০০০ মানুষদের প্রতিদিন উপজেলা সদরে আসতে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। হাতের বৈঠা চালিত নৌকায় নদীপাড় হতে জনপ্রতি ১০ টাকা করে গুণতে হচ্ছে তাদের। সেখানকার একজন বাসিন্দা জবাবদিহির সাংবাদিক তৈয়বুর রহমানকে বলেন-প্রতিনিয়ত আমাদের নদীর এপাড় থেকে ওপাড় আবার ওপাড় থেকে এপাড় আসা যাওয়া করতে হয়।এই রাস্তা দিয়ে হাজার হাজার মানুষের আসা যাওয়া। যতবার পাড় হবেন ততবার ১০ টাকা করে দিতে হয়। মটর সাইকেল পাড় করার জন্য প্রতিবার গুণতে হয় ৩০-৪০ টাকা। সেই হিসেবে এই এলাকার একজন মানুষের দৈনিক অনেক ভাড়া দিতে হচ্ছে। মানুষ বন্যা না হলে অনায়াসে উপজেলা এবং উপজেলা থেকে জেলায় যাতায়াত করতে পারে। বন্যার কারণে অনেক মানুষ পাহাড়ী স্রোতে ঘরবাড়ি হারিয়ে অসহায়।এর মাঝে একদল মানুষ বিবেকহীন ভাবে চড়া ভাড়া আদায় করছেন যা মানবতার পরিপন্থি।উপায় না পেয়ে মানুষ নিরবে সহে যাচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা এসব সিণ্ডিকেটের উপর প্রশাসনের কড়া নজরদারি আহব্বান করেছেন।