চলতি বছরে যাত্রা করবে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আনন্দিত জেলার মানুষ
তৈয়বুর রহমান, সুনামগঞ্জ সদর:
২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর মন্ত্রীসভায় সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়।জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-০৩ আসনের সাংসদ,পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের হাত ধরে সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় এলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ নিয়ে অনেক ঝামেলা ও সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় এম এ মান্নান এমপিকে।সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় যেন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হয় এ নিয়ে কয়েকদফা মানববন্ধন করেছিল সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দারা। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘপথ পরিক্রমায় এবছরই আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করার চিন্তা করছে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সুবিপ্রবি)।
সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই যাত্রা শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি।বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি বিভাগে ১৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হবে ক্লাস। এজন্য সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে। বিষয়টিকে কেন্দ্রে করে জেলার সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের অপেক্ষায় জেলার সর্বস্তরের জনগণ।
সুনামগঞ্জ সাহিত্য সংসদের সহ-সভাপতি প্রভাষক মামুন আহমেদ বলেন- সুনামগঞ্জের এমন কাব্যিক পরিবর্তনে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এমন উন্নয়নের জন্য তিনি সুনামগঞ্জ-০৩ আসনের সাংসদ এবং সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ুয়া শিক্ষার্থী শাহীন আলম বলেন- সুনামগঞ্জের মত হাওর অধ্যুষিত জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় কেবল স্বপ্ন ছিল।এখন তা বাস্তব হয়েছে।এখানে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সাথে হাওরপাড়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শুভ যাত্রায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সুনামগঞ্জ ৩ আসনের সাংসদ এম এ মান্নানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চারটি বিভাগে প্রথমবারের মতো ১৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করবে।জুন মাসের ৬-৮ তারিখ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তিন কর্মদিবসে ১৫১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি নিশ্চিত করেছেন। ভর্তির সময় বাড়িয়ে বাকী ৯ জন পূরণ করবে প্রতিষ্ঠান । গণিত, রসান বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগে লেখাপড়া করবেন এসব শিক্ষার্থীরা। বিপরীতে উপাচার্য (ভিসি) ড. মো. শেখ আবু নঈম ছাড়াও শিক্ষক আছেন ১৭ জন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ২০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকলেও সুবিপ্রবিতে আছেন প্রতি ১০ জনের বিপরীতে আছেন ১ জন। সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক ভবনের চতুর্থ তলায় শুরু হবে ক্লাস। শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষায় পারদর্শী করে তুলতে রসায়ন, পদার্থ ও সিএসই’র জন্য আছে অত্যাধুনিক ল্যাব। টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের ল্যাবের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপাদান যুক্ত করে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হয়েছে ল্যাবগুলোকে। শিক্ষার্থীরা এখানে এসে অনেক কিছু শিখতে পারবেন। প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বেগবান করে তুলতে চলতি জুন মাসের ২ ও ৩ তারিখে ১৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারী যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। উপাচার্য ও শিক্ষকমণ্ডলী ছাড়াও শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন ২৬ জন। প্রাথমিক ভাবে এই জনবল নিয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলায় সুনামগঞ্জ টু সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে উত্তর পাশে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করছে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সুবিপ্রবি)।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সুবিপ্রবি)র উপাচার্য ড. মো. শেখ আবু নঈমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন-বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা নিয়ে আমরা আনন্দিত। সুনামগঞ্জবাসীর জন্য এটি একটি আনন্দের ও ঐতিহাসিক দিন হবে। পহেলা সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করার চিন্তা করছি। সব কিছু ঠিক থাকলে ওই দিনেই সবাইকে নিয়ে উদ্বোধন হবে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম। ১৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস শুরু হবে।
শিক্ষার্থীদের আবাসন বিষয়ে তিনি বলেন- আপাতত শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা যাবে না। তবে মেয়ে শিক্ষার্থীদের কথা আলাদা করে চিন্তা করা হচ্ছে।
ট্রান্সপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেকেই জেলা সদরে থাকাকে বেশ পছন্দ করেন। অনেকে সদরেই থাকবেন। তাদের ব্যাপারে এখনই কোনো ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করা অসম্ভব। তবুও এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছি। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো।
নিজস্ব ক্যাম্পাসের বিষয়ে ড. মো. শেখ আবু নঈম বলেন-দেখার হাওরে ১২৫ একর জমিতে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন, পরিবেশ ও হাওর বান্ধব একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে বলেই প্রত্যাশা আমার। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য থাকবে জলাধার, পাখিদের বিচরণের ব্যবস্থাসহ আরো অনেক কিছু। আর এ সবকিছু চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নকশা সম্পন্ন করা হয়েছে।